-
বর্তমান যুগে আমরা খুব স্বাস্থ্যসচেতন। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমাদের বাচ্চারা অপুষ্টি বা স্বাস্থ্যহীনতায় ভুগছে। কেউ কেউ বলেন বাচ্চাটা খুব হেংলা পাতলা, গায়ে কোন মাংস নেই। আবার মোটাসোটা বাচ্চা দেখলে অনেকেই খুশি হয়ে বলেন আমার ছেলেটা বা মেয়েটা যদি এমন নাদুশ নুদুশ হত। পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য সম্পর্কিত জ্ঞান না থাকায় বাচ্চাদের অপুষ্টি দূর হচ্ছে না। শহরের চেয়ে গ্রামের শিশুরা বেশী অপুষ্টিতে ভোগে। সুস্থ ও স্বাস্থ্যবান শিশুর দৈনন্দিন খাদ্যাভাস কেমন হওয়া উচিত সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হল। আমরা কি একবার ভেবে দেখেছি মোটা-সোটা বা নাদুশ-নুদুশ কিংবা চিকন-হেংলা, পাতলা যেকোন বাচ্চাই কি সুস্বাস্থ্যের অধিকারী?
আজকাল বাচ্চারা এরকম নানা কারনেই মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছে, হয় ওবেসিটি বা স্থূলতা, না হয় ওজন কম। বাচ্চাদের এই অবস্থার কাথা বিবেচনা করেই আজকে আমার লেখা তাদের পিতামাতার উদ্দেশ্যে । বাচ্চাদের বাবা মায়েরা কি খেতে দেবেন বা তাদের কে ছোট বেলা থেকেই কোন খাদ্যাভাসে বড় করবেন।
১-৬ মাসের বাচ্চাদের জন্য মায়ের বুকের দুধ আদর্শ খাদ্য। ৪-৬ মাসের বাচ্চাদের সব্বোর্চ বুদ্ধি ও বিকাশ সাধনের জন্য মায়ের বুকের দুধের কোন বিকল্প নেই। শিশুর বয়স ৪-৬ মাস পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধ চালিয়ে যেতে হবে। শিশুর বয়স ৪-৬ মাস হলে তখন থেকে কিছু বাড়তি খাবার দিতে হবে প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাওয়ার জন্য।
৬ মাস বয়স থেকে ফলের জুস দেওয়া তবে তা অবশ্যই ১৫০ মি.লি বেশী হবে না। বাচ্চাদের স্বাস্থ্যকর খাবারের ( যেমন: ফল, সবজি, ডিম, দুধ ) সাথে ছোট বেলা থেকেই পরিচিত করাতে হবে। চিপস, সফট ড্রিঙ্কর্স, চকোলেট যতই নামি দামি ব্রান্ডের হোক আ কেন এগুলো কোন মতেই স্বাস্থ্যকর খাবার নয়। তাদেরকে না খেতে চাইলেও বার বার স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খেতে উৎসাহী করতে হবে। একবারে বেশী খেতে না দিয়ে ছোট ছোট ভাগে তাদের খাবার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।ছোট বেলা থেকেই দিনে অন্ততপক্ষে ৬০মিনিট তাকে শারিরিক ভাবে সক্রিয় যেমন: খেলাধুলা, ব্যায়াম, হাঁটা ইত্যাদির অভ্যাস করাতে হবে।
১-৬ বছরের বাচ্চা দিনে ৬ চা চামচ চিনি খেতে পারবে।তেল, ক্রিম, বাটার খেতে পারবে ৫-৬ চা চামচ ।
অনেক মা-বাবাই মনে করেন বাচ্চাদের বেশী করে চিনি বা মিষ্টি জাতীয় বা তেল জাতীয় খাবার বেশী দিলে তাদের স্বাস্থ্য ভাল থাকে। এটা আসলে ভ্রান্ত ধারণা। ছোটবেলা থেকেই পরিমিত মিষ্টি জাতীয় খাদ্য বা তেল বা চর্বি জাতীয় খাবার দিতে হবে। পাস্তা, নুডুলস এখনকার বাচ্চাদের প্রিয় খাবার। কিন্তু এগুলো প্রক্রিয়াজাতকৃত শর্করা জাতীয় খাবার। ভাত বা রুটির চেয়েও এসব খাবারে ক্যালরি বেশী থাকে। শর্করা জাতীয় হোল গ্রেইন খাবার ২০০-৩০০ গ্রাম দেওয়া যাবে। ১-৩ বছরের বাচ্চাদের ২ কাপ দুধও দেওয়া যাবে।এক কাপ ফল, এক কাপ সবজি ১-৩ বছরে দেওয়া হয়।
৪-১2 বছর বয়সী বাচ্চাদের জন্য তাদের বয়স ওজন, উচ্চতা ও লিঙ্গ ভেদে ক্যালরির তারতম্য হয় এবং খাবারের পরিমাণ বাড়াতে বা কমাতে হয়। তবে মোটা মুটি মাথায় রাখতে হবে দিনে ২ কাপ দুধ বা দুগ্ধ জাতীয় খাবার দেওয়া যায়। ১০০-২০০ গ্রাম মাছ, মাংস ও ডাল জাতীয় খাবার দেওয়া যাবে। ১-৩ কাপ সবজি, ১.৫-২ কাপ ফল দেওয়া যাবে।
তবে অবশ্যই পিতা-মাতার মাথায় রাখতে হবে যাতে ফাস্ট ফুড, অতিরিক্ত তেল বা মসলা জাতীয় খাবার বাচ্চাদের দেওয়া না হয়। পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি যাতে পান করে সেটাও খেলাল রাখতে হবে। পরিমিত ঘুম মানে ৮ থেকে ১০ ঘন্টা ঘুম বাচ্চাদের জন্য আবশ্যক। কারন মস্তিষ্ক ও দেহের বৃদ্ধি সাধনের জন্য ঘুমের প্রয়োজন। কোন ভাবেই মানসিকভাবে তাদের প্রেসার দেওয়া যাবে না। এভাবে একটি বাচ্চা সঠিকভাবে সুস্থ হয়ে বেড়ে উঠবে, তবেই আজকের দিনে বাচ্চারা আগামী দিনের লিডার হয়ে গড়ে উঠবে।
লেখকঃ
পুষ্টিবিদ সিরাজাম মুনিরা
কনসালটেন্ট ডায়েটিশিয়ান ইবনেসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও কেয়ার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
সিরাজাম মুনিরা |
শিশুর দৈনন্দিন খাদ্যাভাস কেমন হওয়া উচিত? |
শিশু |
- royalbangla.com এ আপনার লেখা বা মতামত বা পরামর্শ পাঠাতে পারেন এই এ্যড্রেসে [email protected]
পরবর্তী পোস্ট |
আপনি জানেন কী চার ধরণের ক্ষুধা আছে |