এলার্জি খুবই পরিচিত এক দৈনন্দিন সমস্যার নাম। প্রত্যেক ঋতুতে ভিন্ন ভিন্ন রকমের এলার্জির প্রভাব দেখা দেয় আমাদের অনেকেরই। ঋতু পরিবর্তনের সময় নানা ধরনের উপসর্গের এলার্জির প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। এছাড়াও ধুলাবালি, কিছু কিছু খাদ্য সহ নানবিধ কারনে এ সমস্যা দেখা দিতে পারে।
এলার্জির লক্ষণ সমুহ
প্রত্যেক মানুষের শরীরে এক একটি প্রতিরোধ ব্যবস্থা বা ইমিউন সিস্টেম থাকে, কোনো কারণে এই ইমিউন সিস্টেমে গোলযোগ দেখা দিলে তখনই এলার্জির বহিঃপ্রকাশ ঘটে। প্রধান উপসর্গ গুলো-
* অনবরত হাঁচি
* নাক দিয়ে পানি পড়া বা নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া
* নাক চুলকানো
* কারো কারো চোখ দিয়েও পানি পড়ে
* চোখ লাল হয়ে যাওয়া
* ডায়রিয়া ও বমি হওয়া
* শরীরে র‍্যাশ ওঠা
* ত্বকে চাকা চাকা হয়, ফুলে ওঠে এবং চুলকানি হয়
* কারও ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট
এলার্জির কারণসমূহঃ
এক জনের দেহ অন্যজনের দেহ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা হওয়ার কারণে এলার্জির কারণও আলাদা। তাই সবার ক্ষেত্রে সব কারণ কার্যকর হয় না। সাধারণ কারণ সমূহের মধ্যে ধুলাবালি, পারফিউম, গরুর মাংস, চিংড়ি মাছ, পুইশাক,বেগুন, কচু, কিছু ব্যথার এবং এন্টিবাইওটিক জাতীয় ঔষুধ, অতিরিক্ত ঠাণ্ডা অথবা গরম আবহাওয়া অন্যতম। এমনকি কীটপতঙ্গের দংশনের কারণেও এলার্জি হতে পারে।
এলার্জি প্রতিরোধের উপায়
১। এলার্জি সৃষ্টিকারী জিনিস থেকে দূরে থাকাঃ এলার্জি প্রতিরোধের জন্য সব থেকে আগে কোন জিনিস আপনার জন্য এলার্জিক, তা খুঁজে বের করা।
* ধুলাবালিতে যদি এলার্জি হয় তবে ধুলাযুক্ত এলাকায় না যাওয়া ও নিজের চারপাশ সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
* এছাড়া যে খাবার গুলো এর জন্য দায়ী সেগুলো দীর্ঘদিন ধরে খাবার তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে।
* আবহাওয়া জনিত এলার্জি দেখা দিলে সর্বদা সহনীয় তাপমাত্রায় থাকা উচিৎ।
২। লবন-পানির দ্রবনঃ
এলার্জির প্রভাবে নাক দিয়ে পানি পড়া খুব স্বাভাবিক ঘটনা সেক্ষেত্রে-
* ১ চা-চামচ লবন , ১ চিমটি খাবার সোডা , ১ কাপ পরিষ্কার বিশুদ্ধ পানিতে মিশিয়ে ফুটাতে হবে।
* ফুটানো মিশ্রন ঠান্ডা হলে ড্রপার দিয়ে ১০ ফোঁটা করে মিশ্রন নাকের এক ছিদ্র পথে প্রবেশ করিয়ে অন্যটি দিয়ে বের করে ফেলতে হবে।
* দিনে ২ বার এর দ্রবন ব্যবহার করলে নাক দিয়ে পানি পড়ার সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
৩। বাস্প ব্যবহারঃ
বিশুদ্ধ পানির বাস্প এলার্জি জনিত সর্দি কাশি সারাতে দারুণ কার্যকরী।
* এক গামলা পরিমান পরিষ্কার পানি ফুটাতে হবে।
* এর মধ্যে অল্প চা পাতা অথবা মেন্থল ব্যবহার করা যেতে পারে
* একটি গামছা বা তোয়ালে মাথায় উপর দিয়ে গামলার দিক্র ঝুঁকে ১০/১২ মিনিট এ গরম বাস্প নিশ্বাসের সঙ্গে নিতে হবে।
৪। উষ্ণ পানিতে গোসলঃ
প্রতিদিনের কাজের সময় বাইরের ধুলাবালি ও রোগজীবানু বা দূষণ ত্বকের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। এতে চুলকানি , লালা হওয়া বা ত্বক ফুলে যাওয়া ধরনের এলার্জি দেখা দিতে পারে। হালকা গরম পানিতে গোসল করার ফলে রোগ জীবাণু নির্মুল হয় এবং আরামের ঘুম হয়, যার ফলে এ ধরনের এলার্জির প্রভাব কমে যায়।
৫। সবুজ চা পাতার ব্যবহারঃ সবুজ চা পাতা এলার্জির দারুণ ঔষধ।
* ১ কাপ সবুজ শুষ্ক চা পাতা বাটিতে নিয়ে তার মধ্যে ফুটানো গরম পানি পূর্ণ করতে হবে ।
* এভাবে ৫ মিনিট রেখে এর মধ্যে মধু মিশিয়ে দিতে হবে অল্প পরিমাণে।
* ঠান্ডা হলে এ মিশ্রন সেবন করতে হবে। দিনে ২/৩ বার সেবন করলে দ্রুত উপকার পাওয়া যায়।
৬। ঠান্ডা পানির ব্যবহারঃ
গরমের কারণে এলার্জি দেখা দিতে ত্বক ফুলে লালচে হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে সেই স্থান গুলোতে বরফ গলা ঠান্ডা পানিতে তোয়ালে ভিজিয়ে লাগালে উপশম হয়।
৭। আদা চা ও মধুঃ
ঠান্ডাজনিত এলার্জির প্রভাব থেকে বাঁচতে আদা কুচি করে চা এর সঙ্গে দিয়ে তার মধ্যে অল্প মধু মিশিয়ে পান করা যেতে পারে।
৮। খাদ্যাভ্যাসঃ
এলার্জিক খাবার ব্যতীত প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি ও ফলমূল খেতে হবে বিশেষ করে ভিটামিন সি যুক্ত খাবার এলার্জি মোকাবেলায় দারুণ কার্যকরী।