1. 
   ফুলকপি বাংলাদেশে একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় শীতকালীন পুষ্টিকর ও সবজি। যার ইংরেজী নাম Cauliflower। আর বৈজ্ঞানিক নাম Brassica oleracea var. botrytis. এটি Cruciferae পরিবারভুক্ত। এটি একটি বার্ষিক ফসল যা বীজের মাধ্যমে বংশবিস্তার করে। সাধারণত ফুলকপির ফুল অর্থাৎ সাদা অংশটুকুই খাওয়া হয় আর সাদা অংশের চারপাশে ঘিরে থাকা ডাঁট এবং পুরু, সবুজ পাতা দিয়ে স্যুপ রান্না করা হয় অথবা ফেলে দেওয়া হয়। ফুলকপি খুবই পুষ্টিকর একটি সবজি এটি রান্না বা কাঁচা যে কোন প্রকারে খাওয়া যায়, আবার এটি দিয়ে আচারও তৈরি করা যায়।
   ফুলকপির গোটা মঞ্জরি একটি ঘনবদ্ধ, মাংসল পিন্ড এবং সেটিই সবজি হিসেবে ব্যবহূত হয়। ফুলকপি ভিটামিন এ, সি ও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ।
   ফুলকপির নানা গুণ
   
2. এক
   ফুলকপি ক্যান্সার প্রতিরোধ করে, ক্যান্সার প্রতিরোধে ফুলকপির বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। এটি ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করে। এছাড়া পাকস্হলী, প্রোষ্টেট, স্তন ও ডিম্বাশয় ক্যান্সার প্রতিরোধেও সাহায্য করে ফুলকপি।
   
3. দুই
   ফুলকপি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে, ফুলকপিতে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা উচ্চ রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণ করে। তাই রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ফুলকপি খাওয়া প্রয়োজন।
   
4. তিন
   ফুলকপি ফুসফুসকে রক্ষা করে, ফুলকপি ফুসফুস রক্ষায় সহায়তা করে। নতুন এক গবেষণায় জানা গেছে, ভয়াবহ ফুসফুস রোগের জন্য যেসব কারণ দায়ী তা প্রতিরোধে ফুলকপি সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। ডায়াবেটিসের কারণে রক্তনালীর যে ক্ষতি হয় সবজিটি তা প্রতিরোধেও সহায়তা করে। এছাড়া ফুলকপি হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।
   
5. চার
   ফুলকপি ভিটামিন ও খনিজের ভালো উৎস, নিয়মিত ফুলকপি খেলে শরীরের পুষ্টির অভাব পূরণ হয়। কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। এছাড়া ভিটামিন কে, প্রোটিন, থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন, নিয়াসিন, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, ফাইবার ভিটামিন বি৬, ফলেট, পটাশিয়াম ও ম্যাঙ্গানিজেরও ভালো উৎস ফুলকপি।
   
6. পাঁচ
   ফুলকপি মস্তিষ্ক ভালো রাখে, ফুলকপিতে ভিটামিন বি রয়েছে যা মস্তিষ্কের উন্নয়নে ভূমিকা রাখে। গর্ভাবস্থায় এ সবজি একটি ভালো খাদ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। নবজাতকের মস্তিষ্কের উন্নতি সাধন করতে কাজ করে সবজিটি।
   
7. ছয়
   ফুলকপি হজমে সাহায্য করে, ফাইবারের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হওয়ায় ফুলকপি হজমে সাহায্য করে।শুধু তাই নয়, সবজিটি ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে সুস্থ থাকতেও ভূমিকা রাখে।
   
8. সাত
   ফুলকপি চোখকে ভালো রাখে, ফুলকপিতে ভিটামিন এ এর পরিমাণ বেশি থাকায় চোখকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। এমনকি দেহের কোথাও কেটে গেলে ফুলকপির কচি পাতার রস লাগালে ভালো ফল পাওয়া যায়।
   
9. আট
   ফুলকপি চুলকানি প্রতিরোধ করে, শীতকালে ঠাণ্ডায় ত্বকে লালচে হয়ে ফুলে যাওয়া এবং চুলকানি হতে পারে। সেক্ষেত্রে ফুলকপির কচি পাতা বেটে লাগালে চুলকানি ভালো হয়।
   তবে ফুলকপিতে প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম থাকায় এটি কিডনি রোগীদের জন্য উপযোগী নয়। সুতারং যারা কিডনির জটিলতায় ভুগছেন তারা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়ে ফুলকপি খাবেন।
   ফুলকপিতে প্রায় সব খাদ্যের চেয়ে অনেক বেশি আয়রন আছে। সবুজ কচুশাকের চেয়ে চার গুণ, ডাঁটাশাকের চেয়ে দেড় গুণ, কলমিশাকের চেয়ে ১০ গুণ, মুলাশাকের চেয়ে ১২ গুণ ও পালংশাকের পাঁচ গুণ বেশি আয়রন আছে।
   খাদ্যোপযোগী প্রতি ১০০ গ্রাম ফুলকপিতে ক্যালসিয়াম ৬২৬ মিলিগ্রাম ও আয়রন ৪০ মিলিগ্রাম থাকে। ফুলকপিতে আয়রনের পরিমাণ আলু, মুলা, মিষ্টিকুমড়া, বেগুন, টমেটো, চিচিঙ্গা ও ঝিঙ্গার চেয়ে বেশি। তবে এ পুষ্টিমান ফুলকপির জাত ও উৎপাদনের স্থানের ওপর নির্ভরশীল।
   তাহলে আর দেরী কেন ? শুরু হয়েযাক মিশন ফুলকপি।
   ধন্যবাদ
   মোঃ ইকবাল হোসেন
   পুষ্টিবিদ চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল জাকির হোসেন রোড, খুলশী, চট্টগ্রাম