সকাল ৬টায় কোপা আমেরিকার দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের ফুটবল ম্যাচ। সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশের ফ্যান ও দর্শকরাও ফুটবল নিয়েও খুবই উত্তেজিত। সাইকোলজিক্যালি ফুটবল খেলা আবেগে পরিপূর্ণ। দর্শক ও ফ্যানরা তাদের প্রিয় দল, প্রিয় খেলোয়াড় এবং সেই টিমের অনুসাঙ্গিক বিষয় নিয়ে এতটাই একাত্ত্ববোধ করেন যে, এগুলো নিয়ে ম্যাচের দিনগুলোতে খুব বেশি আবেগ উত্তেজনায় টইটম্বুর থাকেন। Funk et al.(2000) ফ্যানদের খেলায় সামাজিক, কগনিটিভ ও সাইকোলজিক্যাল উপাদান (পছন্দ, পুর্বের অভিজ্ঞতা, একাত্ত্ববোধ) তার খেলা দেখার উত্তেজনাকে প্রভাবিত করে বলে মনে করেন। রাতে অনেকেই ঘুম খাওয়া বাদ দিয়ে খেলার পরিসংখ্যান, প্যারফরম্যান্স এবং প্রিয় খেলোয়াড়কে নিয়ে সারারাত কল্পনা করতে করতে উত্তেজিত থাকবেন। তার এই উত্তেজনার বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে মনের মধ্যে নেতিবাচক অনুভূতি হবে এবং এটা মানতে না পেরে অনেকেই রাগ ও আগ্রাসী আচরণ করবেন। তার প্রিয় খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সের উপর উত্তেজনা, আবেগ এবং মানসিক সুখ নির্ভর করে।
পূর্বের ভালো খেলা দর্শকদের খুব বেশি প্রভাবিত করে। প্রিয় দলের পূর্বের খেলার সাথে খেলা দেখার প্রতি প্যাশন তৈরি করে। যেমন-বর্তমানে যারা আর্জেন্টিনার সমথর্ক বেশিরভাগের মনে মেরাডোনার খেলার একটা পজিটিভ আবেগ রয়েছে এজন্য তারা আর্জেন্টিনার জন্য অস্থির করে, আর্জেন্টিনাকে নিয়ে ভাবে ও তাদের খেলায় আসক্ত হয়ে পড়ে। আবার যারা ব্রাজিলের পর পর দুটি বিশ্বকাপের পারফরম্যান্স দেখে আপ্লুত হয়েছিলেন তাদের মনেও ব্রাজিল সম্পর্কে একটা ইতিবাচক অনুভূতি তৈরি হয়েছে এবং তাদের ভাবনায় ব্রাজিল ও ব্রাজিল দলের প্রিয় খেলোয়াড়।
দর্শকদের খেলা দেখার মূল কারণ হলো তাদের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা ও এংজাইটি। এই উত্তেজনা ও এংজাইটি প্রিয় দল জিতলেই সুখানুভূতিতে পরিনত হবে এবং আবার পরবর্তী খেলা দেখার জন্য উত্তেজিত হবেন। ঠিক তেমনিভাবে দল হারলে এই উত্তেজনা ও এংজাইটি শোকে পরিনত হবে। শোক হলে প্রথমেই এই পরাজয়কে অস্বীকার করবে, রাগ হবে, তর্ক করবে এবং কেউ কেউ একটা সময়ে সব গ্রহন করে নিয়ে শোক কাটিয়ে উঠবেন। তবে কেউ কেউ এই মনের অশান্তি অনেক দিন বয়ে বেড়াবে। তাই প্রিয় দলের জয় ও পরাজয় যাই হোক আগে মেনে নেয়ার প্রস্তুতি নিন। তাহলে দিনশেষে ফুটবল খেলাই জয়ী হবে এবং আপনি মানসিকভাবে সুস্থ্য থাকতে পারবেন।
লেখক
জিয়ানুর কবির
ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিষ্ট
বি-এস.সি (অনার্স), সাইকোলজি
পিজিটি (সাইকোথেরাপি)
এম.এস ও এম.ফিল (ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি)।
কল্যাণ মানসিক হাসপাতাল
দক্ষিণ কল্যানপুর,মিরপুর রোড, ঢাকা
লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে নিচের ফেসবুক পেইজে ক্লিক করুন
www.facebook.com/jianur.kabir