মহিলাদের জীবনে অন্যতম একটি আনন্দময় ঘটনা মা হওয়া। হরমোনের তারতম্যের কারনে, মা হওয়ার পরে একটু মনমেজাজের পরিবর্তন হওয়া স্বাভাবিক। অনেকেই বাচ্চা জন্মের পর সাধারণত স্ট্রেস, দু: খিত, উদ্বিগ্ন, একাকী কংবা ক্লান্ত বোধ করতেই পারেন। তবে কিছু মহিলা, আরও অনেক মারাত্মক মনখারাপ অনুভব করেন, যাকে সাধারনত প্রসবোত্তর ডিপ্রেশন বলে। এটি কোনও শিশু প্রসবের কয়েকদিন থেকে কয়েকমাস পরেও হতে পারে।
ভয়াবহতাঃ
প্রসবোত্তর ডিপ্রেশন যে কোনও ধরনের মাকেই প্রভাবিত করতে পারে। গবেষনায় দেখা যায়, প্রতি ৭ জনে ১জন মা এই প্রসবউত্তোর ডিপ্রেশনে আক্রান্ত হন এবং যারা এই রোগে আক্রান্ত হন, তাদের অর্ধেকেরই আগে কোন ডিপ্রেশনের হিস্ট্রি পাওয়া যায় না। এই ডিপ্রেশন নিজে থেকে ভালো হয় না। যদি চিকিৎসা করা না যায় তাহলে বেশ কয়েক সপ্তাহ বা মাস ব্যাপি চলতে পারে। দিনের পর দিন ডিপ্রেশন কঠিন হয়ে উঠতে পারে এবং এই ডিপ্রেশনের কারনে মায়ের বাচ্চা বা নিজের যত্ন নেয়ার ক্ষমতা কমে যেতে পারে।
![postpartum depression প্রসবোত্তর বিষন্নতা](/chhobi_shob/359-postpartum-depression3.jpg)
লক্ষণগুলো :
সতর্কতা লক্ষণগুলি ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে আলাদা হলেও, সবার জন্য নিচের লক্ষণগুলোর কয়েকটি থাকতে পারে।
- দিনের বেশীরভাগ সময়ে অকারনে মন খারাপ থাকা বা দীর্ঘসময়ে অকারনে কান্নাকাটি করা।
- যে জিনিসগুলি উপভোগ করতো, সেগুলিতে আনন্দ বা আগ্রহের অভাব বোধ হওয়া।
- ক্ষুধার পরিমান অত্যাধিক বেড়ে বা কমে যাওয়া।
- নিজেকে অপরাধী বা দোষী ভাবা বা ক্রমাগত নিজেকেই দায়ী মনে করা।
- অত্যাধিক বিরক্তি বা ক্রোধ বা রাগ অনুভব করা।
- ভালো মা না হতে পারার ভয় কাজ করা।
- খুব বেশী ঘুমানো বা ঘুমাতে সমস্যা হওয়া ।
- শিশু, পরিবার এবং বন্ধুদের প্রতি আগ্রহ কমে যাওয়া।
- কাজকর্মে মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হওয়া বা সিদ্ধান্তগ্রহনে সমস্যা।
- নিজেই বাচ্চাকে আঘাত করার পরিকল্পনা করা।
এই লক্ষণগুলো ২ সপ্তাহের বেশী স্থায়ী হলে, আপনার প্রফেসনাল সহায়তা প্রয়োজন। তবে লক্ষণগুলো মৃদু বা তিব্র যাই হোক সঠিক চিকিৎসা দ্বারা স্বাভাবিক হওয়া সম্ভব।
![postpartum depression প্রসবোত্তর বিষন্নতা](/chhobi_shob/359-postpartum-depression.jpg)
প্রসবপরবর্তী ডিপ্রেশন কমাতে নিম্নোক্ত পরামর্শ মানতে পারেন
- আপনার অনুভূতি সম্পর্কে সঙ্গী, অন্যান্য বাচ্চার মা, বন্ধু এবং আত্মীয়দের সাথে খোলামেলা কথা বলুন।
- মায়েদের গ্রুপে যোগদান করে, তাদের সাথে কথা বলুন।
- আপনার বাচ্চার দেখাশোনার জন্য পরিবার বা আত্বীয়স্বজনদের সহায়তা নিন।
- বাচ্চাকে সহায়তাকারীর কাছে রেখে যতটা সম্ভব ঘুমিয়ে নিন ।
- কম গুরুত্বহীন কাজ নিয়ে ভাবনা বাদ দিন, প্রয়োজনে নিজের দায়িত্ব কমিয়ে নিন।
- নিজের জীবন সম্পর্কে বাস্তব সম্মত পরিকল্পনা করুন।
- চিকিৎসকের পরামর্শে হালকা ব্যায়াম করুন।
- দিনের একটা সময়ে ৩০-৪০ মিনিট সূর্যের আলোতে থাকুন
- প্রফেশনাল মানসিক সহায়তা নিন। কগনিটিভ বিহেবিয়ার থেরাপি, ডাইলেকটিভ বিহেবিয়ার থেরাপী (ডিস্ট্রেস টলারেন্স, ইমোশনাল রেগুলেশন ও মাইন্ডফুলনেন্স) এই ধরনের ডিপ্রেশন কমাতে খুব হেল্পফুল। তবে প্রসবউত্তোর ডিপ্রেশনের পরিমান খুব বেশী হলে মেডিসিনেরও প্রয়োজন হতে পারে।
আপনার প্রিয়জন প্রসব পরবর্তী ডিপ্রেশনে আক্রান্ত হলে দ্রুত মানসিক সহায়তা নিন।
লেখক
জিয়ানুর কবির
ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিষ্ট
বি-এস.সি (অনার্স), সাইকোলজি
পিজিটি (সাইকোথেরাপি)
এম.এস ও এম.ফিল (ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি)।
কল্যাণ মানসিক হাসপাতাল
দক্ষিণ কল্যানপুর,মিরপুর রোড, ঢাকা
ফোন নম্বর:০১৭৪৮৭৮৭৮২৩
লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে নিচের ফেসবুক পেইজে ক্লিক করুন
www.facebook.com/jianur.kabir