-
বাসের মধ্যে প্রায়ই আপনার বাথরুম চাপে,তেল জাতীয় খাবার খেলে পেট ব্যথা করে।এড়িয়ে যাবেন না,হতে পারে এটি আইবিএস এর লক্ষণ।
ইরিটেবল বাউয়েল সিনড্রম বা আইবিএস দীর্ঘমেয়াদি পেটের পীড়াজনিত রোগ। মূলত এটি খাদ্যনালির একধরনের সমস্যা। মাঝে মাঝে পেট ব্যথা, পেট ফাঁপা, মলত্যাগের ধরন পাল্টে যাওয়া ইত্যাদি আইবিএসের কিছু লক্ষণ।
সমীক্ষায় দেখা যায়, একটি দেশের লোক সংখ্যার ২০ শতাংশ আই বি এসের লক্ষণ বহন করে এবং ১০ শতাংশ ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়। পুরুষদের চেয়ে নারীরা দুই থেকে তিন গুণ বেশি এ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে।
আইবিএস এর লক্ষণ
আইবিএস মূলত একটি সাধারণ গাঁট ডিজঅর্ডার। যাদের আইবিএসের সমস্যা রয়েছে, তারা নিম্নোক্ত সমস্যাগুলোয় ভুগে থাকেন।
স্বাভাবিক বাউয়েল মুভমেন্টে পরিবর্তন হয়, ফলে ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দেয়।
-
এক
পেটে প্রচণ্ড ব্যথা হয়।
-
দুই
মলের রং, আকার এবং ঘনত্বে পরিবর্তন।
-
তিন
পেট ফাঁপা এবং পেটে মোচড় দেয়া।
-
চার
পেটে গ্যাস এবং পেট জ্বালা।
-
পাঁচ
পেট কামড়ানো, ঢেঁকুর ওঠা।
-
ছয়
বমি, ক্ষুধা কমে যাওয়া, খুব অল্পতে পেট ভরে যাওয়া, মুখের স্বাদ নষ্ট হয়ে যাওয়া।
-
সাত
হতাশা, অবসাদ, ক্লান্তিবোধ।
-
আট
ঘুমের সমস্যা, পেশিতে ব্যাথা।
-
নয়
ঘন ঘন প্রস্রাবের চাপ বৃদ্ধি পাবে।
-
দশ
যৌন ক্ষমতা ও ইচ্ছে কমে যাওয়া।
আইবিএস বা ইরিটেবল বাউয়েল সিনড্রম মূলত দুই প্রকার
-
ক
আইবিএস রিলেটেড ডায়রিয়া।
-
খ
আইবিএস রিলেটেড কনস্টিপশন।
তবে কারো ক্ষেত্রে ডায়রিয়া বা কনস্টিপশন এ দুই ধরনের সমস্যা একসঙ্গেই থাকে।
এইবার আপনাদের আমি কিছু কথা বলি,যাতে করে ধারণাটা পরিষ্কার হয়।এই রোগ ২ প্রকার,আবার কারো ক্ষেত্রে একই সাথে ২ টি লক্ষণ হতে পারে।তাই কোনোভাবেই নিজে নিজে ডায়েট করতে যাবেননা।কারণ বাঙ্গালীর এক সাথে বেশ কয়েকটা রোগ খুব স্বাভাবিক,কী থেকে কী ক্ষতি হয়ে যাবে,বুঝতেও পারবেন না।তাই আইবিএস হলে ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ অনুযায়ী খাবার চার্ট করে নিলে,আপনার এই রোগের উপশম হবে বন্ধুর মতো প্রিয়।
তবুও আজ আমি আপনাদের কিছুটা ধারণা দিবো খাবার নিয়ে।
এই জাতীয় খাবারগুলি বেশি খাবেন
-
এক
শস্য
চালের তৈরি পিঠা,চালের তৈরি ফিন্নি,ঝাউ ভাত,সাদা ভাত,খই,মুড়ি,ভুট্টার তৈরি ময়দা ইত্যাদি।
-
দুই
দুগ্ধ
ল্যাকটোজমুক্ত দুধ, চালের দুধ, বাদামের দুধ, নারকেল দুধ,ছানা,ল্যাকটোজমুক্ত দই,হার্ড চিজ ইত্যাদি
-
তিন
ফল
আপেল,নাশপতি,পেয়ারা,কলা, ব্লুবেরি, জাম্বুরা, লেবু,কমলা স্ট্রবেরি ইত্যাদি।
-
চার
শাকসবজি
শিম,গাজর, শসা, বেগুন, আদা, লেটুস, জলপাই,আলু,সবুজ সবজি ইত্যাদি।
-
পাঁচ
প্রোটিন
মাছ, ডিম ,চিনাবাদাম আখরোট ইত্যাদি।
এখন যে খাবারের নাম বলবো তা কোনো ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ অনুযায়ী কম খেতে হবে,রোগের অবস্থা অনুযায়ী কিছু ক্ষেত্রে বন্ধ হয়ে যেতে পারে
-
ক
ল্যাকটোজ
গরুর দুধ, দই, পুডিং, কাস্টার্ড,পনির,দুধের তৈরি সেমাই,পায়েশ ইত্যাদি।
-
খ
ফল
চেরি,আম,বেদানা,তরমুজ,আনার ইত্যাদি।
-
গ
উচ্চ ফ্রুক্টোজ
যেমন মধু
-
ঘ
শাকসবজি
বিটরুট, রসুন,পেঁয়াজ,শাক,শালগম,বাঁধাকপি,ব্রকলি ইত্যাদি।
এবার কিছু টিপস
-
এক
ডায়েটিশিয়ানকে বন্ধু বানিয়ে নিন।
-
দুই
পানির কোনো বিকল্প নেই,সকাল বেলা খালি পেটে ২ গ্লাস পানি পান করুন,আর সারাদিনে ১০-১২ গ্লাস।
-
তিন
কোনো বেলার খাবার বাদ দেয়া যাবেনা,ধীরে সুস্থে চিবিয়ে খেতে হবে ।
-
চার
টেনশন মুক্ত থাকতে হবে,সেক্ষেত্রে মেডিটেশন হতে পারে উত্তম।
-
পাঁচ
কাঁচা শসা সালাদ গ্রহন করবেন না।
-
ছয়
তেল,ঘি,চিনি পরিহার করুন ।
-
সাত
মাংস না খাওয়াই একদিকে উত্তম।
-
আট
ধর্মীয় দিকে মনোনিবেশ করেও চিন্তামুক্ত থাকতে পারেন ।
-
নয়
পাস্তা,পিজা,ফাস্ট ফুড,কফি,ধূমপান,আ্যলকোহল পরিহার করতে হবে।
-
দশ
ডায়রিয়া কমাতে গম এবং গমের তৈরী সকল খাবার পরিহার করুন।
-
এগার
কোষ্টকাঠিন্য কমাতে ফাইবার জাতীয় খাবার গ্রহণ করুন।যেমন গাজর । এছাড়াও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জন্য ইসবগুলের ভুষি খেতে পারেন। ইসবগুলের ভুষি খাওয়ার কিন্তু কিছু নিয়ম ও উপকারিতা আছে।
-
বার
যেসকল পেটের শারীরিক ব্যায়াম রয়েছে তা প্রতিদিন করবেন ।
-
তের
প্রতিদিন নিয়ম করে ৬-৭ ঘন্টা ঘুমাতে হবে।
কোনো রোগকে ভয় পাবেন না,সৃষ্টিকর্তা সব রোগের সমাধান দিয়েছেন।ভয়কে করুন কাবু সাথে আইবিএসকে দিন বিদায়।
ধন্যবাদ
ডায়েটিশিয়ান সিরাজাম মুনিরা
কনসালটেন্ট ডায়েটিশিয়ান
ইবনেসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও কেয়ার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
ডায়েটিশিয়ান সিরাজাম মুনিরা |
দীর্ঘদিন ধরে পেট খারাপ বা আইবিএস হলে কী করবেন |
আইবিএস |
- royalbangla.com এ আপনার লেখা বা মতামত বা পরামর্শ পাঠাতে পারেন এই এ্যড্রেসে [email protected]
পরবর্তী পোস্ট |
আপনি জানেন কী চার ধরণের ক্ষুধা আছে |