বাস্তবতা হলো এ ধরনের সংক্রামক ব্যাধি বা মহামারি থেকে আমরা কখনোই পুরোপুরিভাবে মুক্ত হব না। কালে কালে নতুন নামে, নতুনভাবে নানা ধরনের সংক্রামক রোগ আসবে। সেগুলোকে নিয়েই আমাদের বেঁচে থাকতে হবে। বিষেষজ্ঞরা বলেছেন, এই রোগের আরো দুইটি বা তিনটি ওয়েভ বা স্রোত মানবজাতিকে আঘাত হানতে পারে। তাই অন্তত আগামী দুই বছরের জন্য নিজেদের যতটুকু পারা যায় ,ততটুকু নিরাপদ রাখতে জীবনযাত্রার অল্প কিছু পরিবর্তন আনার চেষ্টা করতেই হবে। দীর্ঘ মেয়াদে যা করা উচিত।
১.অন্তত আগামী এক বছর নিজ এলাকার ভেতর সব ধরনের জনাকীর্ণ পরিবেশ এড়িয়ে চলুন। বাজারে গেলে এমন সময় যাবেন যখন ক্রেতা কম থাকে। পার্ক বা এরকম জায়গায় এমন সময় যাওয়ার চেষ্টা করুন যখন ভিড় কম থাকে।
২.রাস্তার খোলা খাবার বা জনাকীর্ণ রেস্তোরার খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। হোম ডেলিভারির খাবারের মান সম্বন্ধে নিশ্চিত হয়ে তারপর সে খাবার গ্রহণ করুন। কেবল দামী খাবারেই পুষ্টি মেলে তা কিন্তু সঠিক নয়। আপনার বাড়ির আশেপাশে অযত্নে বেড়ে ওঠা শাক-সবজিও আপনার পুষ্টিতে অবদান রাখতে পারে। সম্ভব হলে নিয়মিত মৌসুমি ফল খান।
৩. সামাজিক অনুষ্ঠান যেমন বিয়ে,জন্মদিন এরকম জনসমাগম এড়িয়ে চলুন। পারিবারিক অনুষ্ঠানেও বাহুল্য বর্জন করুন।
৪.খুব জরুরী নাহলে দেশের ভেতরেও দুর পাল্লার ভ্রমন থেকে বিরত থাকুন। পাহাড়-নদী-সাগর-দর্শনীয় স্থান এসব দেখতে সবারই ভাল লাগে। তবে বাস্তবতা হলো নতুন জায়গায় গিয়ে নতুন কাউকে সংক্রমিত করা বা নিজে সংক্রমিত না হওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
৫. নিরাপদ থাকতে আগামী দুই বছরের জন্য বিদেশ ভ্রমণ থেকে বিরত থাকুন। নিজের পুর্ণ নিরাপত্তা সম্বন্ধে নিশ্চিতা না হয়ে কোথাও না যাওয়াই ভাল। সাথে সাথে টিকা নেওয়ার সুযোগ থাকলে সাথে সাথেই টিকা নেওয়া উচিত।
৬. সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ব্যাপারে নিষ্ঠাবান হোন। বেতন বা বিল ইত্যাদি জমা বা গ্রহণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে লাইনে দাড়াতে হলে জায়গা রেখে লাইনে দাঁড়ান। খুব ভাল হয় যদি অনলাইনে লেনদেন করার সুযোগ থাকে তাহলে অনলাইনে লেনদেন করুন।
৭. হাঁচি-কাশি দেয়ার সময় মুখ ঢাকুন। অন্যের হাঁচি কাশি দেখে দূরত্ব বজায় রাখুন। যেখানে সেখানে কফ, থুথু ফেলা এবং মল-মূত্র ত্যাগ করা নিরুৎসাহিত করুন।
৮. বাইরে বের হলে মাস্ক ব্যবহার করা নিরাপদ। তবে সবার জন্য পেশাদার রেস্পিরেটর মাস্ক পরা আবশ্যক নয়।

৯.রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে নিজের প্রতি যত্নবান হোন। অল্প আহার ,বিশ্রাম ও কায়িক পরিশ্রম করুন। পর্যাপ্ত পানি খান।গলা শুকনা থাকলে কোভিড-১৯ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ধুমপান ও মদ্যপান এড়িয়ে চলুন। সকাল ও বিকালে অন্তন আধা ঘন্টা রোদে থাকুন।
১০.সেলুন বা নাপিতের দোকানে সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে । অনেকেই চুল ফেলে দিয়েছেন । অনেকেই বাসায় চুল ফেলে দেওয়া বা ছেঁটে ফেলা শুরু করেছেন । যদি সেলুন স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ বজায় রাখতে সক্ষম না হয়,সে ক্ষেত্রে এড়িয়ে চলা ছাড়া গতি নেই ।
১১.যে ধরণের কাজ বা মিটিং অ্যাপের মাধ্যমে ,ফোনে,ভিডিও কলে বা ই-মেইলে করা সম্ভব, সেসব করার জন্য জনসমাগম করা বন্ধ রাখুন । হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর নিতেও অনলাইনে মিটিং শেষে অনেকে কর্মচারীকে অন্যদের বাসায় পাঠেচ্ছেন, যা অনুচিত ।
১২.পার্টি,ক্লাব,সিনেমা হল,মলড় এ ধরণের জনাকীর্ণ স্থানে যাওয়া থেকে বিরত থাকুন । নিতান্তই যেতে হলে ঘণ্টাখানেকের বেশি অবস্থান করবেন না ।
১৩.অনেক এলাকায় রোগী দেখতে যাওয়ার একটা রীতি প্রচলিত আছে । কেউ অসুস্থ হয়েছে শুনলে দল বেঁধে যাওয়ার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসুন । নিতান্তই সহযোগিতা বা সহমর্মিতা জানাতে চাইলে আর্থিক বা কোনভাবে করুন ।
১৪. বিদেশ থেকে সদ্য আসা ব্যক্তি নিজ দায়িত্বে অন্তত ১৪ দিনের জন্য সবার কাছ থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখুন । সম্ভব হলে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকুন । বিদেশ থেকে ফিরেই গণসংযোগ করবেন না । এতে এলাকার কারও অসুস্থতা থাকলে বিদেশফেরত ব্যক্তি আক্রান্ত হতে পারেন অথবা তাঁর নিজের কোন রোগ থাকলে তিনি সবাইকে আক্রান্ত করতে পারেন ।
১৫.এ ধরনের পরিস্থিতিতে সবারই মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি হবে । অর্থনৈতিক মন্দা ,বেকারত্ব , অনিশ্চয়তায় খিটখিটে বা বদমেজাজি হয়ে উঠবেন । এ অবস্থায় নিজেদের সামলে নেওয়াটাই বড় । প্রত্যেকেই প্রথমে নিজেদের এবং তারপর অন্যের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতিও যত্নবান হন ।
ধন্যবাদ
ডায়েটে কান্সালটেন্ট নুসরাত জাহান
Nutrition and Diet Consultant
ইবনে সিনা ডায়াগনোস্টিক এন্ড কনসালটেশন সেন্টার, কেরাণীগন্জ
মোবাইল: ০১৭৩০-৫৯৯১৭১-২
সালাউদ্দিন স্পেশালাইজড হসপিটাল,ওয়ারী
মোবাইল:০১৭১৮-০৪৬০৯৮
অনলাইন কাউন্সিলিং ০১৮৭-২৪৩৪৪৮১
লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে নিচের ফেসবুক পেইজে ক্লিক করুন
www.facebook.com/trust.a.dietitian