-
প্রতি বারের মত আপনাদের জন্য খাদ্য ও পুষ্টি বিষয়ক বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্য নিয়ে হাজির হয়েছি, আমি ফারজানা আহমেদ। আমি আমার সব কথার সপক্ষে যুক্তি তুলে ধরার চেষ্টা করি যাতে আপনারা ফলো করতে পারেন।
এখন হয়ত মানতে কষ্ট হবে, কিন্তু মা্ত্র ৮০ হাজার বছর আগে মানুষ যখন কৃষিকাজ শুরু করেনি, তখন চিনির জন্য পুরোপুরি ফলের উপর নির্ভরশীল ছিল। সেই ফলও বছরে মাত্র তিন চার মাস পাওয়া যেত; ফলের মৌসুমে। বাকি সারা বছর শিকার করত। ফলে আমিষই ছিল মূল ভরসা।
১০,০০০ হাজার বছর আগে মানুষ কৃষিকাজ শুরু করল। তখন চাল, গম, ডাল এইসব খাদ্য উতপাদন আর মজুদ করা সম্ভব হল। আখ, খেজুর সহ অন্যান্য ফল ব্যপকভাবে মানুষের হাতের নাগালে চলে এল। এসব থেকে চিনি, গুড় আর সিরাপ তৈরি করে সারা বছর ধরে খাওয়া সম্ভব হল। বছরে মাত্র চার মাস ফল থেকে আস্তে আস্তে সারা বছর চিনি খাওয়ার সাথে মানুষের শরীর অভ্যস্ত হল। কোন রকম সমস্যা ছাড়াই।
কিন্তু আজকে চিনি হচ্ছে ভিলেন। সব দোষ গিয়ে পড়ছে চিনির উপর। এটা সত্যি যে চিনি হচ্ছে সবচেয়ে বেশি প্রসেসড ফুড বা প্রক্রিয়াজাত খাবার। আমরা বার্গার, পিজা, সস এগুলোকে প্রসেসড ফুড হিসেবে জানি। কিন্তু চিনি শত শত বছর ধরে আমরা খাচ্ছি, তাই ওভাবে বিচার করা হয়ে উঠে না। চিনি হয় আখের রস থেকে। আখের রসকে অনেক প্রক্রিয়ার মদ্ধ দিয়ে যেতে হয়। এতে আখের রসের মদ্ধে থাকা ভিটামিন, পানি, আশ সহ অনেক কিছুই বাদ পড়ে যায়। থাকে বিশুদ্ধ একমাত্র উপাদান চিনি। তাই চিনি হচ্ছে প্রসেসড ফুড যেটা ন্যাচারাল আখের রস থেকে অনেক ভিন্ন।
আপনারা যখন বিভিন্ন ফল খান তখন ফলের মদ্ধে থাকা চিনি শরীরে ঢুকে। কিন্তু সাথে আরো ভিটামিন, মিনারেলস, পানি ইত্যাদিও পেয়ে যান। ফলে যেহেতু আশ থাকে তাই হজম হয়ে রক্তে চিনি ঢুকতে সময় লাগে। ধীরে ধীরে চিনি রক্তে চিনি ঢুকে। তাই আপনি দীর্ঘক্ষন এনার্জি পান। কিন্তু চা বা ফিরনির সাথে যেই চিনি খান সেটা খুব দ্রুত রক্তে প্রবেশ করে রক্তে চিনির পরিমান বাড়িয়ে দেয়। সেটা আবার দ্রুত কমেও যায় কারন রক্তে ইমব্যালেন্স শরীর সহ্য করতে পারে না। ফলে কিছুক্ষন পর আপনি আবার ক্ষুধার্থ অনুভব করেন। আপনি আবার হালকা নাস্তা খান। এভাবে খাওয়া বেশি হয়ে যায়। হাইলি প্রসেসড ফুডের এই হচ্ছে সমস্যা।
বাংলাদেশে বিভিন্ন আপাত নিরীহ খাবার আসলে চিনিতে ভরপুর। যেমনঃ পাউরুটি, বিস্কুট, সস ইত্যাদি। খাবারের গায়ে লেবেল দেখলে আপনার চিনি ছাড়া খাবার খুজে পেতে বেশ কষ্ট হবে। সব খাবারেই আজকাল চিনি দেওয়া হয় টেস্ট বাড়াবার জন্য। চাইনিজ ফুড চিনির ডিপো। তাই এত মজা। ফাস্ট ফুডের রুটি চিনি ভর্তি। বেকারির রুটি তো এখন এতই মজা যে শুধুশুধুই খাওয়া যায়।
যাই হোক চিনির অপকারিতা নিয়ে বিতর্ক আছে। বিজ্ঞানিদের মদ্ধেও মতভেদ আছে। চিনির সম্ভাব্য অপকারিতাগুলো হচ্ছে শরীর মোটা করা, টাইপ ২ ডায়াবেটিস এর দিকে ঠেলে দেওয়া, মুখে ব্রন, চামড়া কুচকে যাওয়া, তাড়াতাড়ি বুড়িয়ে যাওয়া, ডিপ্রেশন, ফ্যাটি লিভার।
এখন আপনি বলতে পারেন, মানুষ তাহলে শত শত বছর ধরে এটি খাচ্ছে কিন্তু এখন এর বিরুদ্ধে এত অভিযোগ কেন?
শত শত বছর ধরে মানুষ প্রতিদিন প্রচুর পরিশ্রম করেছে। গ্রামে মেয়েরা ঢেকিতে ধান ভেঙ্গেছে। ছেলেরা হাল চাষ করেছে। যারা ধনী ছিলে তারাও এক জায়গা থেকে আরেক যায়গায় যেতে মাইলের পর মাইল হেটেছে। মেশিন না থাকার দরুন সব কাজ হাতে করতে হত। ফলে পরিশ্রম করা হত। এতে যেটা হত সেটা হচ্ছে চিনি থেকে যে অতিরিক্ত তীব্র শক্তি পাওয়া যায় সেটা বার্ন বা ব্যাবহার হয়ে যেত। এখন সেটা আর হচ্ছে না।
তাহলে কি এখন মানুষ অলস হয়ে গেছে? তা নয়। এখন জীবনযাত্রার পদ্ধতি পরিবর্তন হয়েছে। চাইলেই আর হাল চাষ করা যায় না। ঢেকিতে ধান ভাঙ্গা যায় না। হেটে আপনি ঘর্মাক্ত হয়ে অফিস যেতে পারবেন না। হাটার যায়গা কম। সময়ও কম। অফিসের টাইমিং কড়া। মানুষ বেশি। যন্ত্র নির্ভরতা কমানো এখন আর সম্ভব নয়। কিন্তু চিনি খাওয়া কমানো অবশ্যই সম্ভব।
আপনি এক মাস চিনি খাওয়া ছেড়ে দিলেই দেখবেন এরপর বেশি মিষ্টি খেতে আপনার আর ভাল লাগবে না। চায়ে এক চামুচ চিনি না দিলে টেস্ট হয় না। কিন্তু তখন আধা চামচের কম চিনিতেই আপনার খারাপ লাগবে না। আপনার জিহ্বা চিনিতে বেশি সাড়া দিবে। ফিরনি, পুডিং, চা, কেক ইত্যাদি মিষ্টি জাতীয় খাবার আপনি অনেক কম চিনি দিয়ে রান্না করে খেতে পারবেন।
এইলেখা যারা দিনমজুর, রিকশাচালক, খেলোয়াড় অথবা যারা প্রচুর পরিশ্রম করেন তাদের জন্য একদম প্রযোয্য নয়।
ধন্যবাদ সবাইকে।
ডায়েটিশিয়ান ফারজানা
চেম্বারঃ ১৯ একে কমপ্লেক্স, গ্রীন রোড (সেন্ট্রাল হস্পিটালের বিপরীতে), ঢাকা। এপয়েন্টমেন্টঃ ০১৭১-৭২৩৭৭২২
![]() |
ডায়েটিশিয়ান ফারজানা |
চিনি স্বাস্থের জন্য কতটা ভাল ? |
ডায়েটিং |
- royalbangla.com এ আপনার লেখা বা মতামত বা পরামর্শ পাঠাতে পারেন এই এ্যড্রেসে [email protected]
পরবর্তী পোস্ট |
হেলদি ও টেস্টি রাতের খাবার: এগ ভেজিটেবল পাস্তা! |