অনিয়মিত মলত্যাগের সম্পর্কিত সমস্যাকে সাধারণত কোষ্ঠকাঠিন্য বলা হয়ে থাকে । সাধারণ ভাবে নিয়মিত ভাবে পায়খানা না হওয়া স্বাভাবিক হিসেবেই ধরা হয় । যদিও কোষ্ঠকাঠিন্য খুব মারাত্মক কিছু নয় তবে নিয়মিত মলত্যাগ শরীরের স্বাভাবিক পরিস্থিতি ও সুস্থতা প্রদান করে ।
ব্যক্তি বিশেষে স্বাভাবিক মলত্যাগের সময়ের পার্থক্য লক্ষ্য করা যায় । অনেকের দিনে ৩ বার টয়লেটে যাওয়ার অভ্যাস থাকে আবার অনেকের সপ্তাহে ২-৩ বার। উভয়ই ক্ষেত্রই স্বাভাবিক ঘটনা। তবে ৩ দিনের বেশি সময় ধরে পায়খানা না হলে তা ধীরে ধীরে কাঠিন্য লাভ করে এবং তখনই তা কষ্টদায়ক হয় । এই সময়ে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ । স্বাভাবিক শারীরিক প্রক্রিয়া বজায় রাখতে কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করা আবশ্যক । এর কারণ সমূহ জানা থাকলে প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা সহজ হয়।
কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ সমূহ:
মলাশয় যখন অধিক পরিমাণে পানি শোষণ করে তখন কোষ্ঠকাঠিন্যের সৃষ্টি হয় । এটা তখনই ঘটে যখন মলাশয়ের মাংস পেশি ধীরে ধীরে সংকুচিত হয় যার ফলে মল ধীরে অগ্রসর হয় এবং আরো পানি নিঃসরণ করে। এক পর্যায়ে তা কাঠিন্যতা লাভ করে ।
১. নিয়মিত আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ না করলে: আঁশ বা তন্তু যুক্ত খাবার মলের পানি ধরে রাখে এবং শুষ্কতা সৃষ্টি হতে দেয়না। তাই যারা আঁশযুক্ত খাবার গড়ন করে তাদের কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার সম্ভাবনা কম । অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার , ফাস্টফুড, বাজারের খোলা খাবার , উচ্চ চর্বি যুক্ত খাবার, গুরুপাচ্য মাংস প্রভৃতি কোষ্ঠকাঠিন্য তৈরি করে।
২. শারীরিক স্থুলতা: নিয়মিত দৈনন্দিন কাজকর্ম ও সামান্য শরীরচর্চা কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে রক্ষা করে । হাঁটা চলা হজমের জন্য উপকারী এবং সঠিক সময়ে মলত্যাগের সাহায্য করে । বৃদ্ধ বা অসুস্থ ব্যক্তি যারা বিছানায় শুয়ে থাকেন অথবা বসে থাকেন তাদের তাই কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে । সেক্ষেত্রে সামান্য পরিমাণে হলেও হাঁটাচলা করা উচিৎ।
৩. ঔষধ: কিছু প্রচলিত ঔষধ কোষ্ঠকাঠিন্যের অন্যতম কারণ ।
* নেশাজাতীয় দ্রব্য এর কারণ হতে পারে ।
* দুশ্চিন্তা দুর করার জন্য ব্যবহৃত ওষুধ ।
* ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ ওষুধ এটা তৈরি করতে পারে।
* অ্যালুমিনিয়াম যুক্ত অ্যান্টাসিড এ রোগের কারণ।
৪. দুধ: অনেকের দুধ অথবা দুগ্ধ জাত পণ্য খেলেই কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয় ।
৫. গর্ভাবস্থা: গর্ভাবস্থার অনেক রকমের শারীরিক অসুবিধার মধ্যে এটি একটি অন্যতম। হরমোনের পরিবর্তনের প্রভাবে ইউটেরাস প্রসারিত হয় এবং খাদ্যনালী সংকুচিত হয়ে পড়ে ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য বেশ স্বাভাবিক ব্যাপার।
৬. বার্ধক্য: বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানুষের অভ্যন্তরীণ অন্যান্য অঙ্গের মত পাচনতন্ত্র ও যাথাযথ ভাবে কার্যক্ষম থাকেনা । তাই এ সময় ঘন ঘন এ সমস্যা দেখা দিতে পারে । তাছাড়া অনেকেরই নিয়মিত ঔষধ খেতে হয় বৃদ্ধ বয়সে তার কারণেও এটা হতে পারে।
৭. দৈনন্দিন নিয়মের হঠাত পরিবর্তন: ভ্রমণের সময় স্বাভাবিক ভাবেই দিনের কাজের সময়ের ব্যঘাত ঘটে । খাওয়া দাওয়া , ঘুম এবং টয়লেটের নিয়মেরও পরিবর্তন হয়। এসব ব্যাপার স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় কাজে বাধা দেয় , যার কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
৮. অধিক হজমকারী ওষুধ সেবন: অনেকে মনে করে দিনে একবার টয়লেটে যাওয়া অবশ্যই উচিৎ। তাই তার জন্য প্রযোজ্য না হলেও হজমকারী ওষুধ গ্রহণ করে থাকেন । এ ধরনের ওষুধে হিতে বিপরীত হতে পারে। একবার অব্যস্ত হয়ে পড়লে স্বাভাবিক হজম প্রকৃয়া নষ্ট হয়ে যায় এবং ওষুধ বন্ধ করলেই রোগটি দেখা দেয় ।এটা কখনোই উচিৎ নয়।
৯. পর্যাপ্ত পানি পান না করা: দিনে ৪/৫ লিটার পানি পান করলে কোষ্ঠকাঠিন্যের আশংকা কমে যায় । খাবার পাচন প্রকৃয়াকে সহজ করে।
১০. মলাশয়ের সমস্যার কারণে: মলাশয়ের অভ্যন্তরীণ ক্ষত , ঘা অথবা টিউমারের মত জটিল রোগের উপসর্গ হিসেবে এটি হতে পারে ।
কোষ্ঠকাঠিন‌্য থেকেই পাইলস এ রূপ নিতে পারে।তাই খুব মারাত্মক না হলেও জটিলতা দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ ।