-
আমাদের দেশে ভিটামিন ডি এর অভাবজনিত সমস্যায় পড়েন শুধুমাত্র বয়ষ্করাই নয়। আজকাল ছোট বাচ্চাদের মদ্ধেও ভিটামিন ডি এর অভাবজনিত অনেক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। তাই এটি কি, কিভাবে কাজ করে, এর অভাবে কি সমস্যা হতে পার আর আমরা কিভাবে সহজে ভিটামিন ডি পেতে পারি তা নিয়ে আজকে কিছু জানার চেষ্টা করব।
ভিটামিন ডি কি করে?
আমাদের হাড়ের প্রধান উপাদান ক্যালসিয়াম। ক্যালসিয়াম আমাদের হাড়ের গঠন ভাল রাখতে সাহায্য করে। তাহলে হাড়ের গঠনে ভিটামিন ডি এর ভূমিকা কি? ভিটামিন ডি খাবার থেকে ক্যালসিয়াম শোষনে সহায়তা করে। আপনি প্রচুর ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার যেমন দুধ, দই, কচুশাক ইত্যাদি খান। কিন্তু আপনার শরীরে ভিটামিন ডি এর অভাব রয়েছে। তাহলে খাবার থেকে ক্যালসিয়াম আপনার হাড়ে গিয়ে পৌছাবে না। হাড় দূর্বল হয়ে পড়বে। হাড় ক্ষয় রোধ করা এবং হাড়ের গঠনে সহায়তা করা হচ্ছে এর সবচেয়ে বড় ভুমিকা। এর বাইরেও এর কিছু ভূমিকা আছে।
ভিটামিন ডি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভাল রাখে। ফলে সর্দি কাশি জ্বর ইত্যাদি কম হয়। ভিটামিন ডি ডিপ্রেশন কমাতে সাহায্য করে।
ভিটামিন ডি এর অভাবে কি হতে পারে?
হাড় ক্ষয় হতে পারে। ফলস্বরুপ হাটুতে ব্যাথা, কোমরে ব্যাথা বা ব্যাক পেইন হতে পারে। ঘন ঘন সর্দি কাশি ইনফেকশন ইত্যাদিতে আক্রান্ত হতে পারেন। ক্লান্তিভাব বজায় থাকতে পারে। বিষন্নতায় আক্রান্ত হতে পারেন । এটির অভাবে ক্ষত শুকাতে অনেক বেশি সময় লাগতে পারে। চুল কমে যেতে পারে। এগুলো সবই হতে পারে। হবেই যে এমনটা নয়।
কোথায় পেতে পারেন ভিটামিন ডি?
বিভিন্ন ভিটামিনের জন্য আমারা বিভিন্ন খাবারের উপর নির্ভর করি।যেমন ভিটামিন সি এর উৎস হচ্ছে বিভিন্ন ফল বিশেষত টক ফল। ভিটামিন এ থাকে ছোট মাছে । কিন্তু ভিটামিন ডি এর জন্য আমাদের কোন খাবারের উপর নির্ভর করতে হয় না। এটির কাঁচামাল আমাদের শরীরে অটোমেটিক তৈরি হয়ে ত্বকের নিচে অবস্থান করে। সূর্যের আলো ত্বকের উপর পড়লে সেই কাঁচামাল ভিটামিন ডি তে রূপান্তরিত হয়।
কিছু খাবারের মদ্ধে সামান্য ভিটামিন ডি থাকে। যেমন ডিমের কুসুম, তৈলাক্ত মাছ (সেমন, টুনা, কড), বিশেষ ধরনের মাশরুম, গরুর দুধ ইত্যাদি। সমস্যা হচ্ছে এসব খাবার আমাদের দেশের মানুষের জন্য তেমন সহজলভ্য নয়। ক্রয়ক্ষমতাও আমাদের কম। মুরগী যদি ছাড়া ভাবে পালন করা না হয় তাহলে সেই মুরগীর ডিম থকেও ভিটামিন ডি পাওয়া যাবে না। ফার্মের মুরগীর ডিম থেকে তাই এটি পাওয়া কষ্টকর।
মরার উপর খাড়ার ঘা হচ্ছে এসব প্রাকৃতিক খাবার থেকে আমাদের চাহিদার মাত্র ২০% ভিটামিন ডি এর যোগান হয়। তাহলে উপায় কি?
কৃত্তিমভাবে ভিটামিন ডি যুক্ত করে দুধ, সিরিয়াল, ওটমিল ইত্যাদি তৈরি করা হয়। এসব খাবারকে বলা হয় ভিটামিন ডি ফর্টিফায়েড ফুড। এসব খাবার প্রচুর খেতে হবে অথবা সাপ্লিমেন্ট ট্যাবলেট খেতে হবে। সেই ট্যাবলেট আবার এমনি খেলে হবে না। দুধের সাথে খেতে হবে। কারন ফ্যাট ছাড়া আবার ভিটামিন ডি ঠিকমত হজম হয়ে শরীরে প্রবেশ করে না। ব্যাপক ঝামেলা।
এতসব চিন্তা করে খাবার খাওয়া অথবা সাপ্লিমেন্ট ট্যাবলেট খাওয়ার ঝামেলা থেকে আপনি সহজেই মুক্তি পেতে পারেন শুধুমাত্র সাপ্তহে ৪/৫ দিন প্রতিদিন আধাঘন্টা রোদ পোহালে। এটাই সবচাইতে কার্যকর, সহজ আর ন্যাচারাল সমাধান। রোদ লাগানোর ক্ষেত্রে মনে রাখবেন,
-
এক
ভোরবেলা বা বিকালবেলার রোদ লাগালে হবে না। আপনার ছায়া যখন আপনার চাইতে দৈর্ঘে ছোট হবে সে সময়ের রোদ লাগাতে হবে।
-
দুই
জানালার কাঁচ ভেদ করে আসা রোদ দিয়ে কাজ হবে না।
-
তিন
সানস্ক্রিন ত্বকে মাখলে ভিটামিন ডি তৈরি হবে না। কারন সানস্ক্রিন রোদের কার্যকরিতা নষ্ট করে দেয়।
-
চার
রোদ পিঠে লাগালে সবচাইতে দ্রুত ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। কারন পিঠে ত্বকের ক্ষেত্রফল হাত বা মুখের চাইতে বেশি।
এভাবেই মানুষ শত শত বছর ধরে সূর্যের আলোর মাধ্যমে ভিটামিন ডি পেয়ে আসছে।
কিন্তু বর্তমানে ইট পাথরের শহরে সময় করে রোদ পোহানো অনেকের পক্ষেই সম্ভব হবে না। তাই যাদের ভিটামিন ডি এর ঘাটতিজনিত কোন লক্ষন প্রকাশ পেয়েছে (যেমন হাড় ক্ষয়) তারা চুপচাপ ডাক্তারের পরমর্শ অনুযায়ী ভিটামিন ডি এর ট্যাবলেট খেয়ে নেবেন। শাক সবজি, মাছ মাংস, ডিম দুধ বা ফলফলাদি থেকে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি পূরন করার আশা করবেন না।
ধন্যবাদ
ডায়েটিশিয়ান ফারজানা
চেম্বারঃ ১৯ একে কমপ্লেক্স, গ্রীন রোড (সেন্ট্রাল হস্পিটালের বিপরীতে), ঢাকা। এপয়েন্টমেন্টঃ ০১৭১-৭২৩৭৭২২
ডায়েটিশিয়ান ফারজানা |
ভিটামিন ডি এর অভাব পুরণ করবেন কীভাবে? |
পুষ্টি |
- royalbangla.com এ আপনার লেখা বা মতামত বা পরামর্শ পাঠাতে পারেন এই এ্যড্রেসে [email protected]
পরবর্তী পোস্ট |
দাঁতের যত্ন বাড়িতেই |